থিবীর সবচেয়ে সুমধুর ডাক ‘মা’। আনন্দ, বেদনা আর কল্পরাজ্যের যতসব অনুভূতির আলোড়ন— সবই মাকে ঘিরে। ‘মা’ শব্দটি নিজেই একটি অসমাপ্ত গল্প, শ্রেষ্ঠ কবিতা, সময়ের সেরা উপন্যাস...
ইসলাম ধর্মে মা
আল কুরআনে বলা হয়েছে আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। একটি হাদীসে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত (স্বর্গ)।তাছাড়া একটি হাদীসে আছে তা হল মা তিন বার সেবা করার পর বাবাকে এক বার। সেবা করা।
হিন্দু ধর্মে মা
সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে- উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যরে গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যরে গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”
মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই ‘মা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হিসেবে বিবেচিত। মা, মাদার, মম, মাম, আম্মা— যাই বলি না কেন, একজন সন্তানের কাছে তার মায়ের চেয়ে অধিক প্রিয় কোনও কিছুই এই পৃথিবীতে নেই। তাই যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাকে নিয়ে কবিতা গান রচনা আজও অব্যাহত রয়েছে। পিছিয়ে নেই ভারত-ও।
কবি নজরুলের ভাষায়— ‘‘যেখানেতে দেখি যাহা/ মা-এর মতন আহা/ একটি কথায় এত সুধা নাই/ মায়ের মতন এত/ আদর সোহাগ সে তো/ আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই।’’
অথবা কামিনী রায়ের— ‘‘জড়ায়ে মায়ের গলা, শিশু কহে হাসি/ মা তোমারে কত ভালবাসি/ কত ভালোবাস ধন? জননী শুধায়/ “এ-ত” বলি দুই হাত প্রসারি দেখায়? তুমি মা আমায় ভালোবাস কতখানি? মা বলে মাপ তার আমি নাহি জানি/ তবু কতখানি বল, যতখানি ধরে তোমার মায়ের বুকে নহে তার পরে।’’
যে মাকে নিয়ে এত ভালবাসা, কবিতা, গান সেই মাকে স্মরণ করতে ৮ই-মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মা দিবস। অভিধানের ভাষায় মা সে-ই, যিনি একজন পূর্ণাঙ্গ নারী। যিনি গর্ভধারণ করেন, সন্তানের জন্ম দেন এবং সন্তানকে বড় করে তোলেন। তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেওয়ার অধিকারিণী। গর্ভধারণের মতো জটিল এবং মায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অবস্থানে থেকে এই সংজ্ঞাটি বিশ্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছে।
এ কারণেই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় এবং মধুরতম শব্দটি ‘মা’। মা শুধু প্রিয় শব্দই নয়, প্রিয় বচন, প্রিয় অনুভূতি, প্রিয় ব্যক্তি, প্রিয় দেখাশুনা, প্রিয় রান্না এবং প্রিয় আদর। যতগুলো প্রিয় আছে তার সব প্রিয়ই শুধুমাত্র মাকে কেন্দ্র করেই। পৃথিবীর ইতিহাসে সন্তানের জন্মদাত্রী হিসেবে প্রাকৃতিকভাবেই মায়ের এই অবস্থান। মানব সমাজে যেমন মায়ের অবস্থান রয়েছে। পশুর মধ্যেও মাতৃত্ববোধ প্রবল। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মা যাবতীয় মমতার আধার ও কেন্দ্রবিন্দু। তাই পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায়ই মা-এর সমার্থক শব্দটি ‘ম’ ধ্বনি দিয়ে শুরু।
বিশ্বের অনেক দেশে কেক কেটে, বিভিন্ন উপহার দিয়ে মা দিবস উদ্যাপন করা হয়। তবে মা দিবসের প্রবক্তা আনা জার্ভিস দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর অর্থ হল, তাঁকে দুই কলম লেখার সময় হয় না। চকলেট উপহার দেওয়ার অর্থ হলো, তা নিজেই খেয়ে ফেলা।
ভালবাসার ছোঁয়ায় একবার মা-কে জড়িয়ে ধরে শুধু বলো ‘মা আমি তোমায় ভালবাসি, একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে? সারা রাত ঘুম হয়নি।’
No comments:
Write comments